এই মাত্র পাওয়া

Like Now

নির্বাচনের আগে মিলছে না আইএমএফের ষষ্ঠ কিস্তির ঋণ

আন্তার্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি এ বছরের শেষ নাগাদ নাও আসতে পারে। কারণ, দাতা সংস্থাটি সংস্কার কর্মসূচির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে নতুন রাজনৈতিক সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চায়।

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থানরত অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ টেলিফোনে জানান, ‘পরের কিস্তি মার্চ বা এপ্রিলে আসতে পারে। তবে, এটা বাংলাদেশের জন্য কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, বরং ভালোই হবে।’

আগামী ২৯ অক্টোবর আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল দুই সপ্তাহের পর্যালোচনার জন্য ঢাকায় আসবে। গত জুন পর্যন্ত সময়কালের অগ্রগতি পর্যালোচনা শেষে কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আইএমএফ ষষ্ঠ কিস্তিটি আপাতত স্থগিত রেখে ষষ্ঠ ও সপ্তম মিলিয়ে দুটি কিস্তির প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার একসঙ্গে ছাড়তে চায়।

এর আগে তৃতীয় কিস্তির পূর্বশর্ত পূরণ করতে দেরি হওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় করেছিল আইএমএফ।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে ষষ্ঠ কিস্তির পর্যালোচনা সম্পন্ন নাও হতে পারে। যদিও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়া কিস্তি ছাড়ের জন্য বাকি সব শর্তই পূরণ করা হয়েছে।

ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ পেতে দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, দাতা সংস্থাগুলো নিশ্চিত হতে চায় যে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক কার্যক্রমগুলো নতুন রাজনৈতিক সরকার বাতিল করবে না।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি যে, পরবর্তীতে যে সরকারই আসুক না কেন, এই সংস্কার কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ অনুমোদনে দেরি হলেও অর্থনীতিতে সেটার কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কারণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও ভারসাম্য যথেষ্ট শক্ত অবস্থানে আছে।’

তিনি জানান, ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সংস্কারমূলক উদ্যোগের প্রশংসা করেছে।

আইএমএফ মূলত ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ অনুমোদন করে। এ বছরের জুনে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড় করেছে। সেইসঙ্গে ঋণের মেয়াদ ছয় মাস ও ঋণের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার বাড়িয়েছে। এ নিয়ে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩.৬ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।

পরবর্তী কিস্তির জন্য বেশিরভাগ শর্ত পূরণ করেছে সরকার

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণের পরবর্তী কিস্তি পেতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং জ্বালানি ও সার আমদানি বাবদ বকেয়া কমানোসহ গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো পূরণ করেছে বাংলাদেশ।

তবে, এবারও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনায় দুই সপ্তাহের জন্য আইএমএফের একটি মিশনের ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। আগামী ২৯ অক্টোবর তারা ঢাকা আসতে পারেন।

আইএমএফ মূলত ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের একটি ঋণ অনুমোদন করে। এ বছরের জুনে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড় করেছে। সেইসঙ্গে ঋণের মেয়াদ ছয় মাস ও ঋণের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার বাড়িয়েছে। এ নিয়ে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩.৬ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।

প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের ষষ্ঠ কিস্তি পেতে বাংলাদেশকে ছয়টি মানদণ্ড পূরণ করতে হবে, যা আইএমএফের বাধ্যতামূলক শর্ত। এর মধ্যে তিনটি মে মাসে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, জুনে আইএমএফের ১৭.৪ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০.৭৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮.৬৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্জিত হয়েছে।

আগের সরকারের অধীনে বারবার রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। মোট রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে গেছে। কিন্তু গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্থিতি বদলে যায়—ডিসেম্বর ও মার্চের রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এই উন্নতির জন্য কৃতিত্ব দিয়েছেন রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও আমদানি কমে যাওয়াকে।

তিনি বলেন, ‘অর্থপাচার বন্ধ হওয়ায় আরও বেশি রেমিট্যান্স সরকারি চ্যানেলে আসছে। আমদানি কম থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে কোনো চাপ পড়েনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগে ডলার বিক্রি করত। এখন টাকার মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে উল্টো ডলার কিনছে।’

‘চাহিদার তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বেশি। এর কারণে ধীরে ধীরে রিজার্ভ বাড়ছে,’ যোগ করেন তিনি।

গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রায় ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ড ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে এবং এই ধারা অব্যাহত রয়েছে।

কর আদায়ে ব্যর্থতা

রিজার্ভ ও বকেয়া পরিশোধে অগ্রগতি হলেও আইএমএফের দেওয়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

জুন পর্যন্ত ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণেই আইএমএফ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ জোর দিয়েছে।

এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর আদায় কম হওয়ার জন্য দায়ী করেছেন এনবিআরকে পৃথক করা, গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্বল বিনিয়োগ ও এনবিআর কর্মীদের আন্দোলনকে।

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ে আইএমএফের লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ছিল।’

জাহিদ হোসেন বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের কারণ গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে কর আদায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এনবিআরে বিক্ষোভ ও আমদানি কমে যাওয়াতেও রাজস্ব কমেছে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি, তাই বাংলাদেশকে এখন আইএমএফের কাছে এ বিষয়ে ছাড় চাইতে হবে।’

বকেয়া পরিশোধ

জ্বালানি ও সার আমদানির বকেয়া পরিশোধে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি নতুন শর্তও পূরণ করেছে।

জুনে মধ্যে বৈদেশিক পাওনা ৮৭০ মিলিয়ন ডলারের নিচে এবং দেশীয় পাওনা ২৮ হাজার ৭০ কোটি টাকার নিচে রাখার শর্ত ছিল।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুনে বৈদেশিক পাওনা ৩১৪ মিলিয়ন ডলার এবং স্থানীয় পাওনা ১৮ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত সপ্তাহে বলেছিলেন, সরকার আদানি ও শেভরনসহ জ্বালানি খাতের পাওনাদারদের ৫ বিলিয়ন ডলার ও সার আমদানি বিলের ২০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক পাওনার মধ্যে পূর্ববর্তী সরকারের আমলে জমা হওয়া ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ছিল।

অভ্যন্তরীণ দিক থেকে, গত অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া নিষ্পত্তির জন্য ৮৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ করা হয়েছিল। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও বাজেটের অন্যান্য খাত থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই অর্থায়ন করা হয়েছে।

আইএমএফের উদ্বেগ

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, রিজার্ভ ও বকেয়া পরিশোধ ছাড়াও বাংলাদেশ জন্য আরও দুটি বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণ করেছে।

এ মাসের শেষের দিকে আইএমএফ মিশন জুন পর্যন্ত প্রায় ১৮টি বিষয় পর্যালোচনা করবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ এই শর্তগুলোর বেশিরভাগই পূরণ করেছে।

তারপরও জাহিদ হোসেন মনে করেন, আইএমএফ দুটি বিষয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করতে পারে। একটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনা এবং অপরটি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার বিষয়ে সাম্প্রতিক একটি সার্কুলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকার মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে ডলার কেনার ফলে আইএমএফ জানতে চাইতে পারে যে, তারা নিজেরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে কি না।

তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুক্তি হবে, তারা আর অতীতের মতো ব্যাংকগুলোর সুদের হার নির্ধারণ করে দিচ্ছে না।’

ব্যাংকিং সম্পর্কে জাহিদ সতর্ক করে বলেন, সরকার এই খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা করলেও খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার বিষয়ে সাম্প্রতিক সার্কুলারের মাধ্যমে ‘অতীতের কিছু খারাপ অভ্যাস ফিরে আসতে পারে’।

সংবাদসূত্র: ডেইলিস্টার.নেট

Frontpage বাংলার আরও সংবাদ

সরকার আসে সরকার যায়, বিশৃঙ্খল পরিবহন খাত শুধু হাত বদলায়

প্রতিদিন সকালে অফিসগামী মানুষের একটাই প্রার্থনা, ‘আজ যেন কোনোভাবে সময়মতো পৌঁছাতে পারি।’ ঢাকার রাস্তায় বের হলে মনে হয়, প্রতিটি মানুষ একেকজন যোদ্ধা—যাকে

এবার বিনা শর্তে ক্ষমা চাইলেন জামায়াতের আমির

বিনা শর্তে ক্ষমা চেয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, ১৯৪৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কেউ জামায়াতের দ্বারা কোনো কষ্ট

ইসলামবিরুদ্ধ দাবিতে ফরিদপুরে বিচারগানের আয়োজন বন্ধ করে দিল প্রশাসন

ফরিদপুরের নগরকান্দায় ‘ইসলাম পরিপন্থী’ বলে অভিযোগ পাওয়ার পর বিচারগানের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার তালমা ইউনিয়নের রসুলপুর বাজারে গতকাল বুধবার