এই মাত্র পাওয়া

তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর বাগানবাড়ি, ফ্ল্যাট, জমিসহ বিপুল সম্পদের খোঁজ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক

Like Now

তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর বাগানবাড়ি, ফ্ল্যাট, জমিসহ বিপুল সম্পদের খোঁজ

তারিক আহমেদ সিদ্দিকের বিলাসবহুল বাগানবাড়ি। আছে শানবাঁধানো ঘাটসহ পুকুর। গতকাল বিকেলে গাজীপুর মহানগরীর ফাওকাল এলাকায়ছবি: মাসুদ রানা
  • তারিক সিদ্দিকের নামে গাজীপুরে বাগানবাড়ি আছে দুটি।
  • ঢাকার গুলশান ও বারিধারায় রয়েছে বাড়ি ও ফ্ল্যাট।
  • বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে তিনটি প্লট।
  • গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে রয়েছে প্রায় ৪৮ বিঘা জমি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রী শাহিদ সিদ্দিকের বাগানবাড়ি, ফ্ল্যাট ও বিপুল জমির খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের এসব সম্পদ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে।

দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, অনুসন্ধান এখনো চলছে। আরও সম্পদ পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। ব্যাংকে তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর টাকা আছে কি না, কত লেনদেন হয়েছে, সেই তথ্য পাওয়া এখনো বাকি।

দুদকের নথি অনুযায়ী, তারিক সিদ্দিকের নামে গাজীপুরে বাগানবাড়ি আছে দুটি। ঢাকার গুলশানে রয়েছে একটি সাততলা বাড়ি। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তিনটি প্লট রয়েছে তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর।

বারিধারায় রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট ও একটি ফ্ল্যাটের একাংশ। গাজীপুরে আরেকটি সাততলা বাড়ির চার ভাগের এক ভাগের মালিকানা তারেক সিদ্দিকের নামে। এর বাইরে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর নামে প্রায় ৪৮ বিঘা জমি রয়েছে।

বাগানবাড়ি, জমি ও ফ্ল্যাট মিলিয়ে তারিক সিদ্দিকের সম্পদের দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ৩৮ কোটি টাকার বেশি। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সেখানে যে দামে সম্পদের দলিল দেখানো হয়েছে, বাজারমূল্য তার কয়েক গুণ।

শেখ হাসিনার শাসনামলে খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তারেক সিদ্দিক। তিনি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার দেবর।

দুদক জানিয়েছে, তারা ২৪ বিঘা জমি এবং ৪টি ফ্ল্যাট ও ১টি ফ্ল্যাটের একাংশ আদালতের আদেশে জব্দ করেছে। বাকি সম্পদও জব্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশে তারিক সিদ্দিকের সম্পদ আছে কি না, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনার পরিবারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক একটি আলাদা দল করেছে। সেই দলের সদস্যরা এই অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তারেক সিদ্দিক, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে প্রায় শতকোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর বিদেশে সম্পদ রয়েছে কি না, সেই তথ্য জানতে বিএফআইইউকে (বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন তারিক সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ধারণা করা হয়, তাঁরা দেশ ছেড়েছেন। তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জুলাই হত্যাকাণ্ড ও শেখ হাসিনার আমলে গুমের ঘটনায় মামলা এবং দুর্নীতির একাধিক মামলা রয়েছে। মামলাগুলোতে তাঁদের নিয়োগ করা কোনো আইনজীবীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফলে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সম্পর্কে তারেক সিদ্দিক বা তাঁর স্ত্রীর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

শেখ হাসিনার শাসনামলে খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন তারেক সিদ্দিক। তিনি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার দেবর।

শেখ হাসিনার পরিবারের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক একটি আলাদা দল করেছে। সেই দলের সদস্যরা এই অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।

গাজীপুরে দুই বাগানবাড়ি

গাজীপুর মহানগরের ফাওকাল এলাকায় বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা ও টাঁকশাল নামে পরিচিতি দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিডেটের পাশেই রয়েছে তারিক সিদ্দিকের একটি বাগানবাড়ি। ভেতরে আছে ডুপ্লেক্স ভবন, শানবাঁধানো ঘাটসহ পুকুর ও গাছপালা। নথিপত্রে বাড়িটিতে জমির পরিমাণ ১৭৮ শতাংশ বা ৫ দশমিক ৪ বিঘা। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, জমির পরিমাণ অন্তত চার গুণ। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।

তারিক আহমেদ সিদ্দিক

মহানগরীর বাঙ্গালগাছ এলাকায় রয়েছে তারিক আহমেদ সিদ্দিকের আরেকটি বাগানবাড়ি। নাম ‘বাগানবিলাস’। বাগানবাড়িটির ভেতরে একটি দোতলা ভবন, একটি ছোট ঘর, সামনে বড় একটি পুকুর এবং পাশের বিল ও পুকুর দেখার জন্য ‘ওয়াচ টাওয়ার’ রয়েছে। ৫ আগস্ট একদল লোক বাড়িটিতে প্রবেশ করে ভাঙচুর করে এবং লুটপাট চালায়।

বাড়িটির ফটকে শফিক সিদ্দিকের নাম লেখা, যিনি তারিক সিদ্দিকের ভাই। তবে ভূমি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাড়ির ৭৮ শতক (২ দশমিক ৩৬ বিঘা) জমির নামজারি হয়েছে তারিক সিদ্দিকের নামে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বাড়ির সীমানার মধ্যে জমির পরিমাণ অন্তত ১০ গুণ হবে।

দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, অনুসন্ধান এখনো চলছে। আরও সম্পদ পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। ব্যাংকে তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর টাকা আছে কি না, কত লেনদেন হয়েছে, সেই তথ্য পাওয়া এখনো বাকি।

৪৮ বিঘা জমি

দুদকের নথি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রীর প্রায় ৪৮ বিঘা জমির মধ্যে ৩ বিঘা গাজীপুরে (বাগানবাড়ি বাদে)।

২০২২ সালে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নে ৩৮ শতাংশ জমি কেনেন তারিক আহমেদ। মূল্য দেখান ২০ লাখ টাকা। এর চার মাস পর একই এলাকায় তারিক আহমেদ আরও ৩৯ শতাংশ জমি কেনেন।

জমি দুটি কালীগঞ্জের জিন্দাপার্কের কাছাকাছি। তারিক সিদ্দিকের জমির কাছেই মহাসড়ক নির্মিত হচ্ছে। দুদক সূত্র জানায়, এসব জমি কেনার ক্ষেত্রে তিনি যে দলিলমূল্য দেখিয়েছেন, তা বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম। গত রোববার কথা হয় এলাকার বাসিন্দা সরওয়ার আকন্দের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখানে প্রতি শতাংশ জমির দাম ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। যদিও তারিক সিদ্দিক দাম দেখিয়েছেন শতাংশপ্রতি ৫৩ হাজার টাকা।

তারিক সিদ্দিক তাঁর কেনা জমির সঙ্গে বিশ্বাস বিল্ডার্সের ৭ শতাংশ জমি দখল করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই কোম্পানির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ৫ আগস্টের পর সীমানাপ্রাচীর ভেঙে সেই জমি দখলমুক্ত করেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জে তারিক সিদ্দিকের জমি মূলত রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নের তিনটি মৌজায়। ২০২৩ সালে তিনি হিরুনাল মৌজায় ১০০ শতাংশ জমি কেনেন। তিনি স্থাপনাহীন বাড়ির এই জমির দলিলমূল্য দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। রূপগঞ্জে জমি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, ১০০ শতাংশ জমির দাম কম করে হলেও ৫০ কোটি টাকা হবে।

জমির দলিলের তথ্য পর্যালোচনা করে দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গাজীপুরের দাউদপুরের হিরুনাল মৌজায় তারিক আহমেদ ও তাঁর স্ত্রীর নামে একসঙ্গে ২৪ বিঘা জমি রয়েছে। এই জমি তিনি একটি আবাসন কোম্পানির সঙ্গে বদল করেছেন। দুদকের কর্মকর্তারা বলেন, এই ২৪ বিঘা জমি বদলের ঘটনাটি বেশ রহস্যজনক। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, তারিক আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী নিজেদের নামে কেনা জমি আবাসন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে তাদের কাছ থেকে এই পরিমাণ বদল করে নেন। কিন্তু দুই জমির দামে পার্থক্য অনেক।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন তারিক সিদ্দিক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ধারণা করা হয়, তাঁরা দেশ ছেড়েছেন।

দুদকের চার মামলা

দুদক সূত্র জানায়, তিন বিমানবন্দরে চার প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত জানুয়ারিতে তারিক সিদ্দিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যোগাযোগ, নেভিগেশন ও নজরদারি ব্যবস্থাপনা এবং রাডার কেনার সময় প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। একই বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ (তৃতীয় টার্মিনাল) প্রকল্প থেকে ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে ২১২ কোটি টাকা এবং কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ ও রানওয়ে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ১৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসবের সঙ্গে তারিক সিদ্দিক জড়িত।

অন্যদিকে দুদকের নথি বলছে, তারিক সিদ্দিক ও তাঁর স্ত্রী বেশির ভাগ সম্পদ কিনেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারের মেয়াদে অবারিত চোরচন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তার মূল স্তম্ভের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই মাত্রার অবৈধ সম্পদ অর্জন মোটেই বিস্ময়কর নয়। তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রত‍্যক্ষ জড়িতদের পাশাপাশি যোগসাজশকারীদেরও দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে, যেন ভবিষ্যতে এমন অনাচারের পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হয়।

সূত্র: প্রথমআলো

Frontpage বাংলার আরও সংবাদ

ব্যবসায় শীর্ষে স্ট্যানচার্ট ব্র্যাক ও সিটি ব্যাংক, দৈন্যদশায় ৯টি

বার্ষিক মুনাফা অর্জনে প্রথমবারের মতো এক হাজার কোটি টাকার মাইলফলক অতিক্রম করেছে তিনটি শীর্ষ ব্যাংক। এগুলোর মধ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক। অন্য দুটি

একটি পক্ষ তৈরি হচ্ছে, যাতে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে না পারে: মির্জা আব্বাস

বিএনপি যাতে ক্ষমতায় যেতে না পারে, সে জন্য একটি পক্ষ সুচতুর কৌশলে তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা